আমার জন্ম ১৯৮১ সালের ১৬ জুন । যদিও সার্টিফিকেটে সেটা ১৯৮৪ হয়ে দাড়িয়েছে। সার্টিফিকেটের বয়স দিয়ে তো আর আসল বয়স আটকানো যায় না। আমার জন্ম হয়েছে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামে । জন্মদিন টা ছিল বুধবার । আমার মার নাম সদন রানী দাস বাবা স্বর্গীয় নগেন্দ্র দাস । দুই ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট । শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ/বি এস এস । ব্যক্তি জীবনে আমি বিবাহিত । দুই ছেলে সন্তানের বাবা । আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইন্জিনিয়ার কোরের একজন সদস্য ।

আমার স্মৃতিগুলো অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায়। ভালো লাগে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে।
স্মৃতির যে অধ্যায়টি আমার কাছে সবচেয়ে সুখের তা হলো আমার স্কুল জীবন আর শৈশব।

হারানো শৈশব

আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে । শৈশব বলতেই ফুটে উঠে দুরন্ত  একটা মুখের ছবি । হুম বেশ ভালোই ছুটাছুটি করতাম । শৈশবের কথা বললেই চলে আসবে চোর ডাকাত খেলার কথা। গোল্লাছুট, কাবাডি, মার্বেল , ফুটবল, ক্রিকেট কম খেলিনি । আর চলত গ্রামের পুকুরের মধ্য দুপুরে অবাধ বিচরণ । গ্রামে বর্ষা কালে বৃষ্টিতে ভিজার সে কি আনন্দ। কাদায় জড়াজড়ি করে ফুটবল খেলতাম বন্ধুদের সাথে ।

আরো বিশ বছর আগে স্কুল পার করে এসেছি। স্কুল পালিয়েছি, ক্লাস ফাকি দিয়েছি , আরও কত কিছু । সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, নূরুল স্যার ও তপন স্যারের পড়া না শিখে ভয়ে স্কুলে যাইতাম না । আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সকল স্যারদের , যেমন_ গোলাম রসূল স্যার, কৃষ্ণকান্ত স্যার, সুখেন্দ্র স্যার, ইকবাল স্যার, আলী স্যার, আহমেদ আলী স্যার, আছমা ম্যাডাম, প্রমুখ ।  তারপরও সেসব স্মৃতি আমার জীবনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। আমার দুরন্ত শৈশব আর স্কুলের কথা মনে পড়লে মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বড় হলাম। ছোট থাকাই ভালো ছিল।

আমি পড়তাম বিদ্যাকুট অমর হাই স্কুলে। মেরকুটা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে এসে আমি যেনো এক বড় জগৎ দেখতে পেলাম। প্রথম প্রথম নতুন পরিবেশ অস্বস্তিকর মনে হতো। তবে ধীরে ধীরে সেটা আমার বাড়ির মতো আপন হয়ে উঠল।

আমি বড়দের বরাবর সম্মান করে চলি। আর আমার এই গুণ স্কুলে আমাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিচিত করে ফেলে। এ কারণেই হয়তো স্কুলের সব শিক্ষক আমাকে স্নেহ করতেন। শিক্ষক আর বন্ধুদের স্নেহ- ভালোবাসায় আমার স্কুল জীবন হয়ে উঠেছিল আনন্দের ও গৌরবময়।

স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসবের আয়োজন ছিল আমার জন্য বেশ আনন্দের। সারাবছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করতাম। সেদিনটা হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ-কোলাহল, আমোদ-কৌতুকে কেটে যেত। এ দিনে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও নানা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হতো। আমি ভালো ফলের জন্য পুরস্কার না পেলেও প্রতিযোগিতায় অংক দৌড়ে নিয়মিত পুরস্কার পেতাম।

শৈশব আর স্কুলের গল্প করতে গেলে বন্ধুদের কথা আগে বলা দরকার। বন্ধু ছাড়া স্কুল আর শৈশব আমি চিন্তা করতে পারি না বন্ধুগুলোকে আমার অস্তিত্ব মনে হতো। কে বেশি কাছের তা আলাদা করা কঠিন।

আমার অনেক কাছের বন্ধুরা বিদেশে চলে যায়। সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । মাঝে মাঝে যখন ওরা যখন বিদেশ থেকে আসতো তখন খুব আনন্দ হতো আমার। অনেক কথা জমা করে রাখতাম ওদের কে  বলার জন্য।

স্কুল, বন্ধু, শৈশব সবকিছুই আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। সময়ের স্রোত অতীত ফিরিয়ে দেয় না। তাই স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে থাকতে হয় জীবনভর।

কিন্তু ইচ্ছে যতই থাকুক, ব্যস্ত এই যান্ত্রিক জীবনে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করাটা আজকাল তেমন হয়েই ওঠে না।

আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকা যারা আমাদের গড়ে তুলেছেন, তাদের অবদান আমরা কখনই ভুলতে পারব না। যাদের পরম স্নেহের স্পর্শে আজ আমরা সফলতার গোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি । আমাদের ব্যাচের বেশিরভাগ সদস্য দেশের সেবায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে । তারমধ্যে  সেনাবাহিনী,  পুলিশ, শিক্ষক, ডাক্তার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার,  কাষ্টমস অফিসার, ব্যবসায়ী, রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে ।

২০০১ সালে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হই । এখনও কর্মরত আছি । প্রতিটা-ক্ষণ শুভ হোক, মঙ্গলময় হোক আনন্দের হোক , সবাই আমার পরিবারের জন্য আর্শীবাদ ও দোয়া করবেন, আমি যেন সর্বদা দেশের সেবায় নিজের জীবন  উৎসর্গ করতে পারি ।